হরিদ্বার ধর্ম সংসদে মুসলিম হত্যাযজ্ঞের ডাক, বিরোধী দলগুলোর নীরবতা দেশের জন্য বিপজ্জনক

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: হরিদ্বারে অনুষ্ঠিত ‘ধর্ম সংসদে’ মুসলিমদের হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রকাশ্য ডাক দেওয়ার ঘটনা সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম গণহত্যার এই হুমকিকে ধিক্কার জানিয়ে বিভিন্ন ধর্মগুরুগণ ধার্মিক জনমোর্চার আওতায় কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দেয়। বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের পশ্চিমবঙ্গের আমীর মাওলানা আব্দুর রফিক সাহেব, রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী পরমানন্দ গিরি মহারাজ, বোদ্ধ ধর্মগুরু ড: অরুণ জ্যোতি ভিক্ষু, খ্রিস্টান ধর্ম গুরু ফাদার ফ্রান্সিস সিংহ, শিখ ধর্মগুরু তারসিম সিং, জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সাদাব মাসুম প্রমুখ। সাংবাদিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিরও আয়োজন করে ধার্মিক জনমোর্চা। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রসূন ভৌমিক, মানজার জামিল, নাসির আহমেদ, ভানু সরকার  বিশিষ্ট জনেরা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারের এক 'ধর্ম সংসদ' অনুষ্ঠিত হয়। এই 'ধর্ম সংসদে' হিন্দু রক্ষা সেনার সভাপতি প্রভানন্দ গিরি মুসলিম নিধনের ডাক দিয়ে বলেন, "প্রত্যেক হিন্দুকে অব্যশই অস্ত্র তুলে নিতে হবে এবং হত্যাযজ্ঞ চালাতে হবে। এছাড়া অন্য কোন সমাধান নেই।" এই ধর্ম সংসদে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকান্ডে জড়িত সংগঠন 'হিন্দু মহাসভা'র সাধারণ সম্পাদক অন্নপূর্ণা সভায় অংশগ্রহণকারীদের উস্কানি দিয়ে বলেন, "প্রত্যেক হিন্দু সন্তানের উচিৎ পড়ার বই ছেড়ে মুসলিমদের হত্যার জন্য অস্ত্র তুলে নেওয়া।" অন্নপূর্ণা আরও ঘোষণা দেন, "আমাদেরকে অব্যশই কুড়ি লাখ মুসলিমদের ধ্বংস করতে একশো ধর্মযোদ্ধা উৎসর্গ করতে হবে। এইভাবেই আমরা সনাতন ধর্মকে রক্ষা করতে পারবো।"

আজকের প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলনে ধর্মীয় জনমোর্চার নেতারা বলেন, "দেশের বিরোধী দলগুলোর এই ঘটনায় নীরবতার ভূমিকা পালন আমাদেরকে হতবাক করেছে। বিরোধ দলগুলো হিন্দুত্ববাদের প্রতি মৌন সহানুভূতি প্রকাশের দ্বারা টিকে থাকার চেষ্টা করে মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।" সাংবাদিক সম্মেলনের পর কলকাতা প্রেস ক্লাবের সম্মুখে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় জনমোর্চার প্রতিবাদ সভায় কলেজ পড়ুয়া, মহিলা এবং সাধারণ জনগণ অংশগ্রহন করে। এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডে লিখে হরিদ্বারে ধর্ম সংসদের আয়োজকদের গ্রেফতারের জোরালো দাবি জানানো হয়। প্রতিবাদে বক্তারা বলেন, "হরিদ্বারের ধর্মসভায় মুসলিমদের হত্যার ডাক দেওয়ার এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও উত্তরাখন্ড পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।" তারা আরও দাবি করেন যে, ধর্মসভার আয়োজকদের কাউকে গ্রেফতার না করার মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয় তারা আইনের তোয়াক্কা করে না এবং পুলিশই তাদের রক্ষক। অন্যদিকে অংশগ্রহণকারী এক বিক্ষোকারী বলেন, "হরিদ্বার ধর্মসভা থেকে দেশের সংবিধানকে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মূক ও বধিরের মত নীরবতা পালন করছে।" আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, "এই ঘটনা সারা বিশ্বের সামনে দেশকে লজ্জিত করে। তাই আমরা প্রতিবাদে সামিল হয়েছি।" প্রতিবাদ সভায় ধার্মিক জনমোর্চার পক্ষ থেকে সাদাব মাসুম বলেন,"শুধুমাত্র নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য বহু সমাজকর্মী দীর্ঘদিন ধরে জেলবন্দি রয়েছে। তাদের উপর ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অথচ প্রকাশ্য গণহত্যার ডাক দিয়েও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পুলিশি নিরপত্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।" তিনি দাবি করেন যে, সঙ্ঘ পরিবার আসন্ন নির্বাচনগুলোতে বিভাজনের রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মীয় জনমোর্চার কর্মসূচি থেকে দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষদেরকে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয় আজকে।

Post a Comment

0 Comments