স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সময়ের দাবি

আসিফ রেজা আনসারী

করোনা সংক্রমনের দোহাই দিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজসহ সমস্ত রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে কিছুদিন ধরে সরকার শপিং মল, বাজার-হাট, সিনেমা হল, বার এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করেছে। এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে শুধুমাত্র লোকাল ট্রেন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রান্তিক ঘরের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই বরং যে কথা বলতেই হয় তা হল- সরকার একপ্রকার ইচ্ছাকৃতভাবেই সেইসব প্রান্তিক এবং সুবিধাবঞ্চিত ঘরের ছেলেমেয়েদের নিরক্ষরতার অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে নিরক্ষরতার অন্ধকারে সরকার ফেলে দিচ্ছে তার যুক্তি কি? প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বলতেই হয়- যেসব ছেলেমেয়েদের ঘরে না আছে ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাদি তারা অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত। সরকার এ কথা ভাল করেই জানে, তারপরেও সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? এক্ষেত্রে কি সরকার দায় এড়াতে পারে!
Representative Photo. Online Learning. 

সম্প্রতি বিভিন্ন খবরের প্রকাশিত হয়েছে যে দেশের একটা বড় অংশের পড়ুয়া অক্ষর চিনতে ভুলে গিয়েছে। এবিসি বা অ আ ক খ তারা কিছুই জানেনা। তাদের এই পরিকল্পিত পিছিয়ে রাখার দায়ে কি সরকার এড়াতে পারে?
মিটিং হবে, মিছিল হবে, ভোট হবে, জনসমাবেশ হবে সরকারের স্বার্থে আর যারা ভোট দিয়ে সরকারকে নির্বাচিত করবে তাদেরই রেশন কিংবা ৫০০ টাকার বদলে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে, এর যৌক্তিকতা আছে? প্রশ্ন প্রশাসনের কাছে, এ প্রশ্ন আমজনতার হয়ে।

কেননা, সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বলা হয়েছে, কোভিড অতিমারির ধাক্কায় ১০০ জনের মধ্যে ৯২ জন শিশুই ভুলে গিয়েছে স্কুলে শেখা ভাষার প্রাথমিক পাঠ। ৮২ জন ভুলেছে সাধারণ যোগ-বিয়োগের মতো অঙ্কও। সম্প্রতি শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন ‘শিক্ষা আলোচনা’-র সমীক্ষাভিত্তিক রিপোর্ট ‘লার্নিং টুগেদার: দি অপর্চুনিটি টু অ্যাচিভ ইউনিভার্সাল এডুকেশন’ এমনই তথ্য দিয়েছে। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৭২০৪ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে সমীক্ষাটি করা হয়। শুধু তাই নয়, গোটা দেশেই এক অবস্থা। 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজের নেতৃত্বে দেশের পনেরোটি রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, এই অতিমারির আবহে গ্রামাঞ্চলে মাত্র ২৮ শতাংশ, এবং শহরাঞ্চলে ৩৭ শতাংশ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে।

Post a Comment

0 Comments