বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্থা, সমাজকর্মী সাদিকুলের প্রচেষ্টায় পিছু হঠল যোগী-রাজ্যের পুলিশ

আসিফ রেজা আনসারী

ভারতের মতো বিশাল দেশে কাজের ধরন ও সহজলভ্যতা সমান নয়। কর্মসংস্থান নিয়ে একটা সমস্যা রয়েইছে। ফলে এক রাজ্য থেকে অন্যত্র কাজ করতে যাওয়া স্বাভাবিকতা বললে অত্যুক্তি হবে না। কোথাও তেমন সমস্যা না থাকলেও ভিন্নপথে হাঁটছে যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। বাঙালি শ্রমিকদের কাছে পুলিশের নিদান-গোরক্ষপুরে বাইরের লোক, বিশেষত বাংলার শ্রমিকরা থাকতে পারবে না। এ নিয়ে পুলিশ অবশ্য ছেঁদো যুক্তি পেশ করেছে। বাঙালি শ্রমিক থাকলে নাকি যোগীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। তাই বাঙালি খেদাও'-এর পথে হাঁটছে পুলিশ। যোগী আদিত্যনাথের নিরাপত্তা বলে কথা! সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সমাজকর্মীদের সক্রিয়তায় অবশ্য পিছু হটেছে ‘রাম-রাজ্য’র পুলিশ।

অভিযোগ, বাংলায় বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর কোথাও কোথাও বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। গত সপ্তাহে যোগী-রাজ্যেও এমনটা ঘটনা ঘটে। এবার স্থানীয়রা নয়, খোদ পুলিশের তরফেই বাঙালি শ্রমিদের রাজ্য ছাড়ার নিদান দেওয়া হয়।

জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর চৌরিচৌরা থানার অন্তর্গত একটি গ্রামে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করছিলেন প্রায় শ'খানেক বাঙালি শ্রমিক।


তাদের মধ্যে কেউ কেউ পুরানো লোহা প্লাস্টিক কিনে প্লাস্টিকের মগ, বালতি ইত্যাদি বিনিময়ের ব্যবসা করতেন। গ্রামে গ্রামে ফেরি করা মানুষগুলো সেখানে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। গত শনিবার, ২৬ জুন হঠাৎই কয়েক জনের বাসস্থানে অজানা অজুহাতে হানা দেয় পুলিশ। প্রায় ৩০ জনকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। তারমধ্যে ২৩ জন ছিলেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা। অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ওই বাঙালি শ্রমিকদের ধমক দিয়ে বলেন যে, বাঙালি হয়ে উত্তরপ্রদেশে তারা কাজ করতে পারবে না। এমনকী, তাদের আধার কার্ডও কেড়ে নেয় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, সকলেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা। বেলডাঙারই এক যুবকের মারফত ঘটনাটি জানতে পারেন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা এক সমাজকর্মী সাদিকুল ইসলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ ওখানকার ডিআইজি ও সুপারিন্টেনন্ডেন্ট অফ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওখানকার পুলিশ আধিকারিকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। সেদিন পুলিশ ছেড়ে দিলেও পরের দিন ফের থানায় নিয়ে যান।
অভিযোগ, ওইদিন রাতে শ্রমিকরা যে বাড়িতে থাকতেন সেখানে হানা দেয় পুলিশ। বাড়িওয়ালাকে পুলিশ ধুমকি দিয়ে সাফ জানিয়ে দেয়, বাঙালিদের যাতে না থাকতে দেওয়া হয়। ঘটনার পর সাদিকুল ফের গোরক্ষপুর জোনের এডিজি, ডিআইজি, এসএসপি এবং উত্তর গোরক্ষপুরের এসপি-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানান। মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফেও জানানো হয়, জেলার ২৩ জনের নামে কোনও পুলিশের খাতায় কোনও ক্রাইম রেকর্ড নেই। তারা খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ। সেই রিপোর্ট উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরা থানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন সাদিকুল। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে পিছু হঠে। বেলডাঙার পাশাপাশি অন্য বাঙালি শ্রমিকদেরও সমস্যা হবে না বলে নিশ্চয়তা দেয় পুলিশ।

উত্তরপ্রদেশে থাকা মুর্শিদাবাদের শ্রমিকরা জানান, তারা এখন ভালো আছেন। তবে পুলিশ যাতে আর হয়রান না করেন, সেই আর্জিও জানান। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সকলের আধার কার্ড ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকলে যাতে সুস্থভাবে সেখানে থাকতে পারেন সেই বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সাদিকুল ইসলাম বলেন, বেলডাঙার এসডিপিও শেখ সামসুদ্দিন আমাকে এই কাজে সাহায্য করেছেন।

সৌজন্যে: দৈনিক পুবের কলম

Post a Comment

0 Comments