একটা পৈতা, দুটো গুলি, তিনটে হাত ধরতেই হবে

নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে আসাম জুড়ে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে
ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের কলমে,
এ এক বিচিত্র সময়। সরকার বারেবারে আশ্বস্ত করছে যে হিন্দুরা সুরক্ষিত এ দেশে। তাদের কিচ্ছু হবে না। হয়তো হিন্দুরাষ্ট্র ও তৈরি করে দেওয়া হবে৷ কিন্তু এসব বুঝেও হিন্দুরা রাস্তায়, খালি গায় পৈতা দেখিয়ে সেনাবাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে পরছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুলি খাচ্ছে আগামীর হিন্দুরাজত্বে। মারা যাচ্ছে দেশের বুকে দেশের জন্য প্রতিবাদ করেছিল বলে। ১৯ লাখ হিন্দুদের নাম বাদ গেছিল এনআরসিতে এই আমলেই। বিনিদ্র রাত জাগছে হিন্দুরা ও। এই রাত স্রেফ নিজের জন্য না। এ রাত পাশের বাড়ির ওয়াশিকুর বা জাব্বারের জন্য ও। এই রাত মুসলিমের প্রমাণ দেওয়ার রাত। স্বাধীনতা একাহাতে আসেনি।
বিক্ষোভরত জনগণ
এ এক বিচিত্র সময়। বাংলাদেশ আছে, পাকিস্তান আছে, তিন ডজন ইসলামি রাষ্ট্র আছে কিন্তু এ দেশের মুসলমানরা তবু ও পথে নামছে হক বুঝে নিতে। স্বাধীনতার পর থেকে বারবার প্রমান দিয়ে যাচ্ছে তবু জমি ছাড়ছে না। সরকার হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে তোমরা অবাঞ্ছিত এ দেশে তবু ও পরে
থাকবে এখানেই, জাপ্টাজাপ্টি করে থাকবে কোন হিন্দুছেলের হাত ধরে।
ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছে সহনাগরিকেরা, সারে জাঁহা সে আচ্ছা আমার দেশ। বৈচিত্র্যময়, বিভিন্নতার দেশ। সে দেশের চরিত্র বদলে গেলে পথে নামা হবে না? যে মান্টো অভিমান করে চলে গেছিল, যে বড়ে গুলাম আলী খান সাহেব ফিরে এসেছিল, যে ফিরোজ ওরফে দিলীপ কুমার, শাহরুখ, আমীর, সলমন কালজয়ী হয়েছিল এই ভূমিতে, তাদের জবাব দেবো কি?
আগামী প্রজন্ম যখন ইতিহাসের বই লিখবে, এটা ও লেখা থাকবে, ফখরুদ্দিন আর আম্বেদকরের এ দেশে শেষ অবধি লড়াইটা হয়েছিল বুকে বৈচিত্র্য ধরে রাখার। এ লড়াই হিন্দু লড়েছিল, এ লড়াই মুসলমান লড়েছিল, এ লড়াই ভারতীয় লড়েছিল।
জিন্নাহ, গোডসে আর খানসেনাদের আমরা খুশি হতে দেবো না। না। না। এই লড়াই এ অনেক দাগ লাগবে, রক্তের দাগ ও, লড়ে যান। এই দাগ আচ্ছে হে! ইতিহাস এই দাগ সোনার হরফে লিখে রাখবে।

Post a Comment

0 Comments