জরায়ু কেটে বাদ দিচ্ছেন মহিলারা, মর্মন্তুদ ঘটনার নেপথ্যে ভাত-কাপড়!

দীপা দাস

আদিবাসী ও দলিত বা আমাদের সভ্য লোকেদের কথায়, নিচু স্তরের মানুষদের কঠিন  জীবন যাপনের আরও এক করুন ও চাঞ্চল্যকর  নিদর্শন উঠে এলো সম্প্রতি। মাস গেলে হাতে আসে কয়েকটা টাকা আর সেই টাকাতেই ছেলে মেয়ে সংসার আর নিজের জীবন কোনও রকমে কাটে। কিন্তু মাসিক রজঃস্রাবের কারণে বেশ কিছু দিন কাজে যেতে পারেন না মহিলারা। ফলে টাকাও পান না। কিন্তু সংসার চলবে কেমন করে! বাধ্য হয়েই বাদ দিচ্ছেন জরায়ু। মহারাষ্ট্রের কয়েকটি জেলা মিলিয়ে প্রায়  তিরিশ হাজার এমন মহিলা রয়েছেন।

আখের খেতে কাজ করা মহিলারা জানাচ্ছেন, মাসের ৪/৫  দিন মাসিক বা রজস্রাবের কারণে কাজে না যাওয়া মানেই সেই অল্প টাকা থেকেই টাকা কেটে নেওয়ার ভয়। এমন ভয়াবহ নির্মম নিদর্শন বোধ হয় দেশের আর কোথাও দেখা যায়না।
জানা যাচ্ছে, আখের ক্ষেতে ভাড়াটে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবিধার্থেই তারা নিজেদের জরায়ু ফেলে দিচ্ছেন।
প্রতি বছর, ওসমানাবাদ, সাংলি ও সোলাপুরসহ আরও কিছু জেলা থেকে দরিদ্র পরিবারের হাজার হাজার মানুষ, যেখানে প্রচুর পরিমাণে আখের ক্ষেত রয়েছে সেইসব জেলায় আখ কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যায়।
প্রতীকী ছবি সৌজন্যে: বিবিসি

নারীরা কাজে গেলে অনেক সময়ই স্থানীয় ঠিকাদারদের শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হন। এমনকি তারা নারীদেরকে নিয়োগ দিতেও গড়িমসি করে। আর অজুহাত হিসেবে বলে, মাসিকের সময়ে নারীরা আখ কাটার পরিশ্রম সাধ্য কাজ করতে পারবে না। পিরিয়ডের সময় ব্যথার কারণে কোনও নারী কাজে যোগ দিতে না পারলে তাদের অর্থ কাটা যায়। আখ শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করতে দূর-দূরান্তে যায় তাদের বসবাসের পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। মাঠের কাছাকাছিই তাঁবুতে তাদের দিনযাপন। এমনকি অনেক যায়গায় শৌচাগারও থাকে না। আর আখ কাটার ভর-মৌসুমে তো রাতেও কাজ করতে হয়। তাই, কে কখন ঘুমাতে যাবে কখন উঠবে তার কোনও ইয়ত্তা নেই
 
আশার কথা, এই বিষয়ে  মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের কাছে চিঠি লিখলেন নীতিন রাউত। চিঠিতে তিনি দাবি করেন, কোনো মহিলাকে জীবন ধরণের জন্য যেন এমন করুণ পদক্ষেপ না নিতে হয়। সরকার সেদিকে সেই দিকে সুদৃষ্টি দিন। তিনি লিখেছেন, আখ খেতে  কাজ করা রাজ্যের তিরিশ হাজার মহিলা শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে নিজের জরায়ু বাদ দিয়েছেন। শুধু হাত-কাপড়ের তাগিদে। উল্লেখ্য, আখ খেতে যে  মহিলারা কাজ  করেন  মাসিক এর প্রভাবে কয়েক দিন কাজ করতে পারেন না। ফলে কাজের মজুরিও পান না। কিন্তু পেট চলবে কীভাবে? তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই শল্য চিকিৎসা করিয়ে নিচ্ছেন মহিলারা। এতে বন্ধ হচ্ছে মাসিক বা রজস্রাব। ফলে কাজ করতে আর বাধা থাকে না। কাজে কামাইও হয় না, পুরো মাসের মজুরিও তাঁদের হাতে আসছে। চিঠিতে কংগ্রেস নেতা তথা দলের সিডিউল্ড কাস্ট সেলের চেয়ারম্যান নীতিন রাউত সরকারকে বলেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেন কোনও মহিলাকে আর এমন না করতে হয়। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। 

Post a Comment

0 Comments