আসিফ রেজা আনসারী
তুমি তো মেয়ে একটু নিচু গলায় কথা বলতে পারো না? মেয়েছেলে, এতো দোড়ঝাঁপ কেন! এসব এখন অতীত। হ্যাঁ– বাংলার মেয়ে তানিয়া সান্যাল ভেঙেছেন দেশের ইতিহাস। গতানুগতিকতার উর্ধ্বে ওঠে দৃষ্টান্ত গড়ার তালিকায় নবতম সংযোজনও। কলকাতার উপকণ্ঠে সিঁথি রোডের বাসিন্দা তানিয়া এখন দেশের প্রথম মহিলা দমকলকর্মী। শুধু তাই নয়, নবাগতদের প্রশিক্ষকও।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgH1bKq6XkYVgI0sbz26eW9oeT4qr1by2ZMhwPKFVk68CXluxHzu0n6Xdcd-buVxQPqqECLq_H-u27zDf3R1Hn9Z8JM7s9P-vUdZr57KpTe4ArdnjppSGe_8qv-ZR7TAntZtWwmDqiymaY/s320/Taniya+Sanyal.jpg) |
নিজস্ব চিত্র |
প্রসঙ্গত, দেশের মেয়েরা একদিকে যেমন অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে আসছে তেমনি নিজেদের দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষরও রাখছে সর্বত্র। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের প্রথম ফ্লাইট কমান্ডার হয়েছেন হরিয়ানার ভূমিকন্যা শালিজা ধামি। অন্যদিকে অরুণাচল প্রদেশের পেনং ডমিং নিযুক্ত হয়েছেন ভারতীয় সেনার কর্নেল পদে। সেই তালিকাতে আরেকটি নাম বাংলা তথা কলকাতার মেয়ে তানিয়া। এয়ারর্পোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার প্রথম মহিলা দমকলকর্মী ২৭ বছরের তানিয়া সান্যাল গত বছর কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কাজটা অবশ্য সহজসাধ্য ছিল না। মনের অদম্য জেদ ও বাড়ির উৎসাহের উপর ভর করেই তানিয়া আজ সাফল্যের চূড়ায়।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhBFW8f6fKCsUsT4T5VGuiyB-Z0_LgrdwBohVLS2y73fz1Il14_BL-R-1rfvTYZHKsE8dmd3SdbzFXVT8y-FxUQMq-PkK58KldQaHcX7mNMyuuMTW_Ud0Ad-WlQgUB6M3-0z7vLyKJ82Ms/s320/Taniya+Sanyal+2.jpg) |
নিজস্ব চিত্র |
সালটা ২০১৮। খবরের কাগজে একটি বিজ্ঞাপন তাঁকে স্বপ্ন দেখাল চ্যালেঞ্জিং পথকে পাড়ি দেওয়ার। হতে চেয়েছিলেন আমলা, হয়ে গেলেন দমকমকর্মী। তিনি বলেন– তখন আমি খবরের কাগজে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখে একমূহূর্তও দেরি করিনি। বাড়িতে না বলেই আবেদন করি। তারপর বদলে গেল জীবনটা। তানিয়ার কথায়– প্রথম অনলাইনে লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় আমি উর্ত্তীণ হই। প্রথমে বাড়িতে খবরটি জানানোর পর সকলে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। তবে বাবা কিশোর সান্যাল ও মা রুমা দেবী কোনও বাধা দেননি। বরং মেয়ের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ওড়িশার ভুবেনেশ্বর। সেখানে একের পর এক শারীরিক সক্ষমতা– ডাক্তারি পরীক্ষা– ড্রাইভিং টেস্ট সবই সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, অন্য ৫৫ জন পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে একমাত্র মেয়ে তানিয়া সমানতালে পাল্লা দিয়ে মই দিয়ে উপরে ওঠা থেকে ৪০ কিলো ওজনের বস্তা পিঠে করে দৌড়ানো সবই করেছেন। এমনকী রাজধানী শহর দিল্লির ফায়ার ট্রেনিং সেন্টারে কঠোর প্রশিক্ষণেও দক্ষতার ছাপ রাখেন। অবশেষে কলকাতা বিমানবন্দরে যোগ দেন জুনিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন ফায়ার সার্ভিস পদে। শুধু তাই নয়, তানিয়া এখন কলকাতার ফায়ার ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষকও। বিমানবন্দের আগুন লাগলে কীভাবে মোকাবিলা করবেন শেখাচ্ছেন নবাগতদের।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEilRG4fitZaFqqbInC2rwG1eY_v0klYkyI719I1EaLPhdGL-oz2y0f67YC0WQOPsjuBwSV3YY1ps6ekhGMcstVwXm8CbCevSpnfo3wTOWbM5tjWRo76Lq9zrNpAA5SrvVba3krl-NZ6R-A/s320/Taniya+Sanyal.JPG) |
নিজস্ব চিত্র |
আপনাদের কাজটা ঠিক কী রকম? তানিয়ার কথায়– আমরা শুধু আগুন নেভানোর কাজই করি না। যদি বিমান দূর্ঘটনা ঘটে তবে সেই মানুষগুলোকে উদ্ধার করাও আমাদের কাজের অঙ্গ। তিনি জানান– বিমান দূর্ঘটনা হলে মাত্র ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের মধ্যেই উদ্ধার করতে হয় বিমানকর্মী ও যাত্রীদের। ওই সময়ের মধ্যেই যদি উদ্ধার করা না যায় তবেই সব শেষ। ফলে কাজটা অনেক কঠিন সঙ্গে চ্যালেঞ্জিংও। একজন মেয়ে হয়ে কখনও মনে হয়নি পথটা কঠিন বা অন্যদের থেকে দূর্বল? ‘না, মেয়ে বলে কোনও দিনই পুরুষদের থেকে কম বা আলাদা মনে হয়নি।’ নতুনদের কী বলবেন? তানিয়ার জবাব– ঘর থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। কে কী বলবে মনে করলে তো কিছুই করা যাবে না। দক্ষতা ও মেধা কাজের মধ্যমে প্রমাণ করে দিতে হবে।
![](https://1.bp.blogspot.com/-Kq4AkX4ovjs/Xeu8x9d5DnI/AAAAAAAAEgE/9fSjQP7H5SEdKkJLUARUcBTEnwU5MakmACLcBGAsYHQ/s320/Taniya%2BSanyal3.jpg) |
নিজস্ব চিত্র |
উল্লেখ্য– দমদমের সিঁথি রোডের বাসিন্দা তানিয়ার স্কুল জীবন কেটেছে সিঁথির রামকৃষ্ণ সংঘ সারদা বিদ্যামন্দির। পরে মধ্য কলকাতার রামমোহন কলেজ থেকে ২০১৩ তে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক ও ২০১৫ তে বারাসাত গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করেন। খেলাধুলা– নাচ-গানেও অম্ভব পারদর্শী তিনি। বড়দিও তাঁর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন।
0 Comments