মৃত্যুর পরও বেঁচে আছে সজল: কিন্তু কিভাবে ?

রিয়া দাশ গুপ্ত : বছরের শেষের দিকে ঘটে গেল এমন একটি ঘটনা যা আমাদের সামাজিকতার এক অভাবনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ালো। গত বুধবার বছর কুড়ির একটি তরতাজা প্রানের মৃত্যু ঘটলো। নাম-সজল কর, বাড়ি-পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদা, দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রের বাবা নিতান্ত কৃষক মাত্র। তবে খালি পেটেও মানুষ স্বপ্নদেখে আকাশ ছোঁয়ার। স্বপ্ন ছিল ছেলে মানুষের মত মানুষ হবে, তাকে খুঁটি করেই বেঁয়ে উঠবেন তারা। কিন্তু নিয়তির খেলায় পরাজিত হলো তাদের স্বপ্ন। বাইক এক্সিডেন্টে মাথায় প্রচন্ড রকমের আঘাতে ব্রেন ডেথ হয়ে মৃত্যু ঘটলো বছর কুড়ির সজলের। কিন্তু মৃত্যু ঘটলেও আজ ও সে জীবিত। পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসলেও জয় হলো সামাজিকতার। সময়কে উপেক্ষা করে সজলের মা বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন সজলের "অঙ্গদানের"। অঙ্গ প্রতিস্থাপন হল পাঁচ পাঁচটি শরীরে। সজল মারা গিয়েও বাঁচিয়ে গেল পাঁচ পাঁচটি প্রান। পিজি হাসপালে গেল তার স্কিন, বেসরকারি হাসপাতালে গেল তার দুটো কিডনি, পড়ে রইলো তার কর্নিয়া। অবশেষে হাবিবুর রহমান বেঁচে গেলেন সজলের হৃদপিন্ডের স্পন্দনে। কোথায় ধর্ম? কোথায় আমাদের জাত? মানবিকতা জাতপাতের মুখে চুনকালি লেপে দিল আরো একবার। একজন "মানুষের" দেহ বিভক্ত হয়ে বেঁচে রইলো আরো পাঁচ জন "মানুষ"। সজল চলে গিয়েও রয়ে গেল আমাদের সকলের মাঝে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহ পুরো সমাজ পেল এক নতুন সামাজিক বার্তা। স্যালুট জানানো হলো সজলের পরিবারকে। সন্তান হারা পিতা-মাতা হয়ে উঠলেন "সামাজিক যুদ্ধের" এক অন্যতম "বীর যোদ্ধা"। সজল তুমি বেঁচে থাকো আজীবন আমাদের মধ্যে। আশা রাখি, এমন হাজারো সজল বেঁচে উঠুক হাজারো মানুষের শরীরে। তৈরী হোক "আমরা অমর" এর নতুন অধ্যায়।অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা রুগীর পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞবদ্ধ।

তাদের এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ আজ অনেক গুলি প্রাণ বেঁচে উঠলো। অঙ্গ প্রতিস্থাপন একটি মহৎ কাজ এবং যদি এরওকম আরো অনেক পরিবার এগিয়ে আসেন তাহলে সারা দেশে অনেক জীবন এইভাবে বেঁচে উঠবে। আমরা আশা রাখছি রোগীর পরিবার দের এই কাজ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

Post a Comment

0 Comments