আসিফ রেজা আনসারী
ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হওয়ার ইতিহাস অনেক লম্বা। অভিযোগ ওঠে, ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যদের মদদ ও রাজনীতির কারবারিদের ছত্র-ছায়ায় কিছু অসাধু মানুষ দখল করছে ওয়াকফ সম্পত্তি। বোর্ডের তরফে অবশ্য মাঝে মাঝে কঠোর পদক্ষেপ করা হয়। তবে যাবতীয় আইনি প্রতিবন্ধকতার ফাঁক গলে বেদখল চলতেই থাকে। এমনই একটি ঘটনা ফের সামনে এলো। টিপু সুলতানের বংশধরদের দানকৃত ওয়াকফ সম্পত্তির একটা বড় অংশ বেদখল হয়েছে। টালিগঞ্জ এলাকায় বর্তমানে একটি ফাঁকা মাঠ আছে, যা ওয়াকফ সম্পত্তি, সেখানে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকার ৫১/১বি, সতীশ মুখার্জি রোডে ‘মহীশূর ফ্যামিলি ফতেহ ফান্ড ওয়াকফ এস্টেট’ নামে একটি সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তির ইসি নং- ৮৩০২। পাশেই টিপু সুলতানের বংশধরদের কবর রয়েছে। সেই কবরস্থান গোটাটাই দখল হয়েছে। পাকা বাড়ি, পুরনিগমের লাইট, ড্রেন ইত্যাদি পরিষেবাও দেওয়া হয়। অবৈধ দখলের উপর এমন পরিষেবা ও বাড়ির তৈরির অনুমতি কিভাবে মেলে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আগে মসজিদ ছিল সেই মসজিদটাও দখল হয়ে গিয়েছে। আগে সাধারণ মানুষ সহজেই মসজিদে যেতে পারতেন, বর্তমানে সবটাই দখল করে বাড়ি তৈরি হয়েছে। মসজিদে জুয়া-মদের ঠেক চলে বলেও অভিযোগ। নতুন করে ছোট আকারে ম¨ির করা হচ্ছে সমগ্র ওয়াকফ সম্পত্তির বিভিন্ন জায়গাজুড়ে। সংশ্লিষ্টমহল মনে করছে, সরকার যাতে দখলদারদের তুলতে না পারে তাই মন্দির তৈরি করে ধর্মীয় সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে অভিযোগ, কবরের পাশে ওয়াকফ সম্পত্তি জোর করে দখল করেছে কুমার সাহা ও তার ভাই প্রদীপ সাহা ওরফে ঘোটনা সাহা। বর্তমানে সেই ফাঁকা জায়গায় ফের অবৈধ নির্মাণ করছে কুমার সাহা ও তার ভাই প্রদীপ সাহা ওরফে ঘোটনা সাহা। ইতিমধ্যেই বাঁশের প্যান্ডেল তৈরির জন্য কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ নিয়ে পুবের কলম-এর পক্ষ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের তোলা ছবি মুছে দিতে বাধ্য করা হয়। ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যেই আছে ‘কালীঘাট তরুণ ক্লাব’। সাংবাদিকদের ঘিরে ধরা দখলদাররা বলেন, এখানে ছবি তোলা বা খবর করতে হলে ক্লাবের অনুমতি লাগবে।
এ নিয়ে ‘মহীশূর ফ্যামিলি ফতেহ ফান্ড ওয়াকফ এস্টেট’-এর মুতাওয়াল্লি তথা সেক্রেটারি এস এম শাহিদ আলম জানান, বিগত ২০-২৪ বছর ধরে আমরা ওয়াকফ বোর্ডের কাছে তদবির করছি কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ২০১৯ সালেও আমরা ওয়াকফ বোর্ডে অভিযোগ করি। এমনকী, ওয়াকফ ট্রাইবুনালে মামলা করা হয়। ট্রাইবুনালের রায়ে ওয়াকফ বোর্ডের সিইও এবং বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে ৬ মাসের মধ্যেই অবৈধ দখলকে মুক্ত করা হয়। পুলিশ-প্রশাসন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সাহায্য নিয়ে এটা করতেই হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল ওয়াকফ ট্রাইবুনাল। ওয়াকফ সম্পত্তি কেউ দখল করতে পারে না। আইনে আছে, যেকোনও সময় দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাবে। আইনে শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু ওয়াকফ বোর্ড কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না বলে অভিযোগ। বারবার অনুরোধ, ওয়াকফ ট্রাইবিনালের রায়, ইত্যাদির পরেও ওয়াকফ বোর্ডের তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি।
এ দিকে ওয়াকফ সম্পত্তির দখল করা নিয়ে অভিযুক্ত কুমার সাহা পুবের কলম প্রতিবেককে বলেন, ৭০ বছর ধরে মানুষ দখল করে বসে আছে। জনবসতি হয়ে গেছে, সবার ভোটার কার্ডও আছে। তাই বলে তিনি কি ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করবেন? এ নিয়ে অবশ্য জবাব দিতে পারেননি কুমার সাহা।
প্রসঙ্গত, ১৭৯৯ খ্রিস্টাধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে এক যুদ্ধে নিহত হন টিপু সুলতান। তাঁর পরিবারের লোকজনকে ভেলোরের দুর্গে বন্দি করে রাখে ব্রিটিশরা। ভেলোরে তখন বিদ্রোহ হয়। এইসময় ইংরেজরা টিপু সুলতানের পরিবারের প্রতি সন্দেহ করে তাদের একটা বড় অংশকে কলকাতা পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে ‘মহীশূরের বাঘ’ টিপু সুলতানের পরিবারের সঙ্গে কলকাতার সংযোগ। সেই পরিবারেরই লোকজন অভিযোগ করছেন, ওয়াকফ বোর্ডে অভিযোগ জানানো, ওয়াকফ ট্রাইবুনালের রায় হওয়ার পরেও দখলদারদের সরাতে পদক্ষেপ করছে না বোর্ড।
(তথ্য সহায়তায় পুবের কলম)
0 Comments