আর্থ-সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় জরুরি জাত-ভিত্তিক জনগণনা, দাবি বিশিষ্টদের

আসিফ রেজা আনসারী

নানান জাতি ধর্মের মানুষ ভারতবর্ষে বসবাস করেন। ধনী গরিব সকলের এই দেশের প্রতি যেমন সমান দায়বদ্ধতা রয়েছে, একইসঙ্গে রয়েছে সমান অধিকার। সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়নের অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার হয়ে গেলেও দেশে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে কোনও জাতি একদিকে যেমন এগিয়ে গিয়েছে, অন্যদিকে বহু জাতি এবং সম্প্রদায় এখনও রয়েছে অন্ধকারের মধ্যে। সামাজিক এই বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন জাতি-ভিত্তিক জনগণনা। যাতে প্রত্যেক জাতির আর্থ-সামাজিক অবস্থান সুস্পষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, চাকরি-বাকরি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাতে প্রত্যেক জনজাতির সমান অধিকার বা সমানুপাতিক অংশগ্রহণ থাকে এ বিষয়টাও নিশ্চিত করার দাবি তুলছে একাধিক সংগঠন। আর এই লক্ষ্যে বিশেষ আলোচনাসভা হয়ে গেল কলকাতায়। শনিবার কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হলে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া তরফে এ দিন ছিল এক আলোচনাসভা। সংবিধানের মূল চেতনা দেশবাসীর জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় সুনিশ্চিত করার জন্য দরকার জাতি-বর্ণ-ভিত্তিক জনগণনা শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এসডিপিআই পার্টির রাজ্য সহ-সভাপতি স্বপন কুমার বিশ্বাস। তিনি অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার। এছাড়াও ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার ও প্রাক্তন মন্ত্রী সুখবিলাস বর্মা, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার ও প্রাক্তন সাংসদ বিক্রম সরকার, জেডিইউ-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি অমিতাভ দত্ত, এনডিপিআই-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সঞ্চয় সরকার, বেঙ্গল ডিপ্রেসড ক্লাসেস লীগ-এর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ দাস।


এ দিন সকলেই জাতি-ভিত্তিক জনগণনার পক্ষে সওয়াল করেন। বক্তাদের মতে উচ্চস্তরের ব্রাহ্মণ্য গোষ্ঠী ক্ষমতায়নের প্রশ্নে পিছিয়ে পড়া মানুষকে আজীবন পিছিয়ে রাখতে চায়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই জাতি-ভিত্তিক জনগণনা করতে দিতে চাইছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন দলের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রত্যেক জায়গায় অংশগ্রহণ হলে সব জাতি সমানভাবে এগোবে এবং দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে বলেও বক্তব্য রাখেন সকলে। 

অন্যদিকে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তায়েদুল ইসলাম বলেন, দেশে সমাজতন্ত্র এবং নায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে সমতা, ভাতৃত্ববোধ, সংহতি এবং অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা দরকার। আর এক্ষেত্রে উন্নয়নকে সকলের কাছে পৌঁছাতে হলে উন্নয়নের ব্যালেন্সড ডিস্ট্রিবিউশন হওয়া দরকার। তারা মনে করেন, জাত-ভিত্তিক জনগণনা হলে দেশের বাজেটে জাতি-ভিত্তিক প্রতিবিধান থাকবে। শুধু তাই নয়, দেশের নির্বাচন পদ্ধতিতেও সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেএসডিপিআই। প্রত্যেক জনজাতির আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি সর্বত্র থাকা দরকার বলেও তিনি মনে করেন। আর এই কারণেই তারা জাত-ভিত্তিক জনগণনা চাইছেন। আগামী দিনের কাজ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন মানুষ যারা সমভাবাপন্ন বা এই ইস্যুতে একইরকম মতামত রাখে এসব দল বা মানুষদের নিয়ে মঞ্চ গঠন করা হবে। তৃণমূলস্তরে মানে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাবে এই মঞ্চ বা সংগঠন। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন এমএলএ এবং এমপিদের কাছে চিঠি দিয়েছে। রাজ্যপালের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া এবং বিধানসভা ও অভিযানের প্রসঙ্গেও ভাবনাচিন্তে চলছে বলে জানেন তায়েদুল ইসলাম। 

Post a Comment

0 Comments