শুধু বাংলায় কথা বলতে চেয়েছিল রোকেয়া, পাকিস্তানি তকমা দিল মারোয়াড়ি দোকানদার!

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: কলকাতা বাংলার রাজধানী। বাংলা পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ভাষার একটি। একমাত্র বাংলা ভাষার জন্য তৈরি হয়েছে পৃথক দেশ, প্রাণ দিয়েছেন মানুষ। সেই বাংলা ভাষায় কথা বলতে চেয়েই পাকিস্তানি তকমা জুটল খোদ কলকাতাতেই। তাও আবার বিহারী দোকানদারদের কাছে। মঙ্গলবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল শহর কলকাতা। থানাতেও দায়ের হয়েছে অভিযোগ।

জানা গিয়েছে, বড়বাজারে এক বিহারী পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত ও অশ্লীলভাবে লাঞ্ছিত বৃদ্ধা সহ বাঙালি মহিলা। বাংলা বলার জন্য বলা হল "পাকিস্তানি"। পরে অবশ্য বাংলা পক্ষর উদ্যোগে বড়বাজার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। 
এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা দুই বাঙালি মহিলা, ফতেমা আক্তার ও তার শাশুড়ি রোকেয়া বিবি বাজার করতে বড়বাজারে "আনুরাগ টেক্সটাইল" নামক দোকানে ঢোকেন। আনুরাগ আগরওয়াল নামক এক মারোয়াড়ির দোকানে কেনাকাটার সময়ে বাংলার মাটিতে বাংলা জানা এই দুই বাঙালি নারী দোকানদারের হিন্দি কথা না বুঝতে পারায় তাকে একাধিকবার বিনীতভাবে অনুরোধ করে বাংলায় বলতে। বাংলা বলা ও হিন্দি না বোঝার কথা শুনে আনুরাগ আগরওয়াল তাদের বলে যে বাঙালিদের হিন্দি বলতেই হবে, যে এটা হিন্দুস্তান এখানে শুধু হিন্দি চলবে। এই দুই বাঙালি মহিলাকে বলে যে হিন্দি না বললে ভারত তাদের জন্য না, তারা পাকিস্তানি। শুধু তাই নয়, তিনি মহিলার উপর হাত তোলেন এবং টাকার ব্যাগ কেড়ে নেয়। মোবাইল ছিনতাই করার চেষ্টা করে, অশ্লীল গালাগালি দেয়, শরীর ধরে টানাটানি করে এবং বলপূর্বক বাঙালি বৃদ্ধাকে আটক করে রাখে। রোকেয়ার বউমা ফতেমা আক্তার বাংলা পক্ষর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা অফিসে সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। সঙ্গে সঙ্গেবড়বাজার থানার পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে বাংলা পক্ষ। থানায় অভিযোগ জমা করার পর এই দুই মহিলা বড়বাজার থানার পুলিশের দেওয়া নিরাপত্তা রক্ষী সহ নিরাপদ স্থানে পৌঁছন। বাংলা পক্ষর রাজা ঘোষের নেতৃত্বে দুই মহিলাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 
এদিকে বাংলা পক্ষের বক্তব্য, বাংলা ও বাঙালির রাজধানী কলকাতার বড়বাজারে বহিরাগত অপরাধীরা ১০০ বছরের বেশি সময়ে ধরে সেখান থেকে বাঙালিকে মেরে ধরে তাড়িয়ে দখল করেছে। প্রতিদিন এখানে শত শত বাঙালি লাঞ্ছিত হয়, অপমানিত হয়, মার খায়, প্রতারিত হয়। এর আগে বাঙালি ব্যবসায়ী রোহিত মজুমদারকে এই বড়বাজারেই বহিরাগত ব্যবসায়ী-রুপী গুন্ডারা বাংলা বলার জন্য বাংলাদেশী বলে ও মোবাইল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাংলা পক্ষর সাথে উনি যোগাযোগ করলে পরের দিন তাকে নিয়ে বাংলা পক্ষর শত শত বাঙালি যোদ্ধা বড়বাজারে ঢুকে বড়বাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে। এই বড়বাজারে ব্যবসায়ী সেজে থাকা বাঙালি-বিদ্বেষী বহিরাগত কালোবাজারি ও মজুতদারি করা অপরাধীরা ১৯৪৩-এ ৬০ লাখ বাঙালিকে খুন করে দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে। এই বহিরাগত অসাধু ভেজাল করা, মজুতদারি করা, কালোবাজারি করা অপরাধীরা আজ কলকাতা ও বাংলার প্রায় সকল জেলার পুঁজির দখল নিয়েছে। বাংলা পক্ষ সব বাঙালি-বিদ্বেষী অপরাধীদের নির্বিষ করে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পরিশেষে কলকাতা পুলিশ ও বড়বাজার থানাকে আক্রান্ত বাঙালির সহযোগিতা করার জন্য রক্তজবা শুভেচ্ছা। বাংলার পুলিশের সব পদে ভর্তির পরীক্ষায় বাংলা ভাষার লিখিত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার যে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলা পক্ষ, আজকের ঘটনা যা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Post a Comment

0 Comments