নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: নেট, সেট, জেআরএফ থাকলেও পিএইচডি'তে ভর্তির জন্য অযোগ্য ওবিসি'রা

আসিফ রেজা আনসারী


সারাদেশে আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস বা ওবিসি-রা যে উচ্চবর্ণের দ্বারা বঞ্চিত হয়ে চলেছে তা এখন সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। আর তাই মণ্ডল কমিশনের মাধ্যমে তাদের জন্য দেশজুড়ে কিছু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সংরক্ষণ রয়েছে চাকরি এবং উচ্চশিক্ষায়। কিন্তু হলে কি হবে। আইন থাকলেও তার কিছু ফাঁকফোকর তো রয়েছে। আর তারই বেড়াজালে ওবিসিদের বঞ্চনার সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। এরই একটি নজির পাওয়া গেল মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। সেখানে পিএইচডি-র জন্য ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি ক্যাটিগোরিতে দু’টি আসনে সংরক্ষণ থাকলেও সিলেকশন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন– তাঁরা পিএইচডি করার যোগ্য কোনও মুসলমান বা হিন্দু ওবিসি প্রার্থী খুঁজে পাননি। তাই ওই দু’টি আসনে পিএইচডি করার জন্য কাউকে নির্বাচন করা হয়নি।
পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি শ্রেণিতে ভাগ করে সংখ্যালঘু এবং পিছিয়েপড়া শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা করেছিলেন তা কিন্তু ছেঁদো যুক্তি দেখিয়ে বাতিল করা হচ্ছে। শুধু নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়– এ জিনিস চলছে অন্যান্য উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রতেও।
সমস্ত রকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নাকি কোনও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি। পিএইচডির কোর্সে ভর্তির জন্য ওবিসি ক্যাটিগোরির ছাত্রছাত্রীদের ঠিক এভাবেই বঞ্চনার অভিযোগ উঠল সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।

প্রসঙ্গত– সরকারি চাকরি ও পড়াশোনার জন্য রাজ্যের পিছিয়েপড়া শ্রেণির মানুষ হিসাবে ওবিসি-এ’তে ১০ শতাংশ ও ওবিসি-বি’ক্যাটিগোরির জন্য ৭ শতাংশ সংরক্ষণ চালু হয়েছে। অভিযোগ– বহু প্রতিষ্ঠান সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। সেই তালিকায় এবার নাম উঠল রাজ্য সরকার পরিচালিত আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের।
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি কোর্সে ভর্তির জন্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল– তাতে ইতিহাস বিভাগের জন্য ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি ক্যাটিগোরিতে একটি করে মোট দু’টি আসন সংরক্ষিত ছিল। নিয়ম নেমে যথারীতি পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। এ দিকে ফাইনাল মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হলে দেখা যায়– ওবিসি ক্যাটিগোরির সংরক্ষিত আসনে কোনও প্রার্থীরই নাম নেই।
অভিযোগ– আবেদনকারীদের নেট– সেট– জেআরএফ বা এমফিল থাকার পরও যোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্রের খবর– কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে পিএইচডি করার জন্য মোট ২৬ জন ওবিসি-এ প্রার্থীকে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ২০ জনই নেট– সেট অথবা জেআরএফ উত্তীর্ণ। আর বাকি ৬ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এলিজিবিলিটি টেস্ট বা রেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। অন্যদিকে– ওবিসি-বি’তে ছিলেন ২৪ জন। তাদেরও কয়েকজন নেট– সেট কিংবা জেআরএফ-সহ যোগ্যতামানের পরীক্ষা উত্তীর্ণ। দুই ক্যাটিগোরিতে এই ২৬ জন ও ২৪ জনের মধ্য থেকে কাউকে নেওয়া হয়নি। বরং মন্তব্য করা হয়েছে– ‘নট ফাউন্ড স্যুইটেবল এনএফএস’)।

বিভিন্ন মহলের অভিযোগ– পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্য গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে। সংরক্ষিত আসনেও কেন ২৬ জনের মধ্য থেকে একজনকেও নেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলেন– ওবিসি-এ ক্যাটেগরিতে যেমন পিছিয়ে পড়া মুসলিমরা রয়েছেন– তেমনি ওবিসি-বিতে রয়েছেন বেশিরভাগ পিছিয়ে পড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

এভাবে ওবিসিদের বঞ্চিত করা আদতে পিছিয়ে পড়া হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে এগিয়ে যেতে না দেওয়ার পন্থা।
ঘটনটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ফেসবুক– ট্যুইটারে অনেকেই ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী– সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঞ্চিত পডয়াদের একাংশ। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির জন্য আবেদনকারী অনগ্রসর শ্রেণির প্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।

অন্যদিকে– বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনি অবশ্য উত্তর দেননি। তাঁর ছেলে ও পরিবারের লোকজন ফোন ধরছেন। তাঁদের বক্তব্য– তিনি সংবাদমাধ্যমে কথা বলবেন না।
বিষয়টি নিয়ে কী বলছেন ছাত্র শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা?

সৌজন্যে: দৈনিক পুবের কলম


Post a Comment

0 Comments