রজঃস্রাব মানে থেমে থাকা নয় : দিশা দেখাচ্ছে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুল

আসিফ রেজা আনসারীঃ নারীর জীবনে ঋতু অর্থাৎ রজঃস্রাব একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে অপবিত্র বলে নারীকে দুরে রেখেছে আমাদের সমাজ। অথচ ঋতুবতী নারী হয়ে উঠেন নতুন প্রজন্মের আধার। মাতৃজঠর সন্তান ধারণ ক্ষমতার অধিকারী কিনা তা কিন্তু রজঃস্রাবই ঠিক করে দেয়। এটাই সত্যি যে, আমাদের দেশে পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েরা চিরকালই সুবিধা বঞ্চিত। আমাদের আর পাঁচটা মানুষের গতানুগতিক ধারণা মতে ওটা নাকি 'অচ্ছুত সময়'। সে সময় ওরা মানে মেয়েরা পা রাখেনা স্কুলের চৌকাঠে। মন্দির মসজিদ! তৌবা! মুখে আনলেই পাপ। কিন্তু মেয়েরা জাগছে তার প্রমাণ মিলছে নানাদিকে।
     সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার একটি স্কুল দিশা দেখাচ্ছে তথাকথিত সভ্য সমাজের কাছে। আগামী দিনে একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ থাকবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। প্রসঙ্গত দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলে রোটারী ক্লাব অফ সল্টলেক(সেন্ট্রাল) ও ইনার হুইল ক্লাব অফ কলকাতা (নিউ) এর যৌথ উদ্যোগে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের ও ইনসিনেটর বসানো হয়েছে সম্প্রতি । শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের জন্য পুস্তক, গরীব পড়ুয়াদের পোশাক প্রদান করে ওই দুই সংস্থা। রোটারী ক্লাবে পক্ষে রোটারীয়ান রজত মৈত্র ও রোটারীয়ান অমৃতা কেডিকে পাশে পেয়ে খুশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার মাইতি।
(প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার মাইতির সাথে ছাত্রীরা) 

      কিন্তু হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগ? কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ২০০৮ সালে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা পুরকাইত ঋতুর সময় বাড়ির অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করার ফলে জীবাণু সংক্রমণে মারা যায়। সেই থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, আর মৃত্যু নয়। রজঃস্রাবের সময় মেয়েদের স্কুল না আসা কমাতে তিনি উদ্যোগী হন। তখনই একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্রয় মেশিন বসানো হয়। মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে তিনটি প্যাড প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে সম্প্রতি আরও দুটি মেশিন ও তিনটি ইনসিনেটর, কম্পিউটার ইত্যাদির শুভারম্ভ হয়েছে। স্কুলের এই উদ্যোগের ফলে মেয়েরা আজ প্রতিদিনই স্কুলে আসে। শুধু তাই নয় রীতিমতো খেলাধুলায় অংশগ্রহণও করে। রফিজা পাইক, হাফিজা খাতুন, অর্পিতা অধিকারীদের মুখে হাসি ফুটেছে। রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিষেবা চালু হয়নি তা একটি স্কুল করে দেখাচ্ছে! সত্যিই প্রশংসনীয় বলছেন সকলেই। কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার নারীকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে তৎপর বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কাজে অনেকটাই সহায়তা করবে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের উদ্যোগ একথা বলা বাহুল্য। বাকিরা কবে এই পথে পা বাড়াবে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়....... 

Post a Comment

0 Comments