নবী সা.–এর অবমাননা বিদ্বেষপ্রচারের অংশ, দায় এড়াতে পারে না বিজেপি

আসিফ রেজা আনসারী

নবী সা.–এর অবমাননা বিদ্বেষপ্রচারের অংশ, দায় এড়াতে পারে না বিজেপি। বুধবার এমন কথাই বললেন বিশিষ্টরা। কারণ, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে সারা বিশ্বে নিন্দিত হয়েছেন বিজেপি নেতা নূপুর শর্মা নবীন জিন্দাল। যা নিয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। ভারতের বাইরে আরবের বিভিন্ন রাষ্ট্র-সহ নানা দেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মুহাম্মদ সা. বিশ্বের এক মহান পুরুষ যিনি শেষ নবী হিসেবে এবং মানুষের পথপ্রদর্শক রূপে কোটি কোটি নারী-পুরুষের কাছে অনুসরণীয় বলে বিবেচিত। তাঁকে নিন্দা করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টার বিরুদ্ধে এবার এক প্রবল প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।

এই ঘটনার বিরুদ্ধে এবার সরব হলেন বাংলার বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। বুধবার বিকালে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের সংগঠন ধার্মিক মোর্চার তরফ থেকে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলেন করা হয়। সেখানে নবী মুহাম্মদ সা.-এর অবমাননা বিদ্বেষভাষণের বিরুদ্ধে সরব হন বিশিষ্টরা। শুধু তাই নয় দোষীদের কঠোর শাস্তি না দিলে, প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।

দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিনিধি স্বামী . প্রেমানন্দ গিরি মহারাজ, জামাআতে ইসলামি হিন্দের রহমত আলি খান, বৌদ্ধ ধর্মগুরু . অরুণজ্যোতি ভিক্ষু, আচার্য গোপাল ক্ষেত্রী, খ্রিস্টান মিশনারি অ্যাসোসিয়েশনের বিশপ পিটার অলোক মুখার্জী, শিখ ধর্মের প্রতিনিধি স্বরণ সিং এবং কলকাতা খিলাফত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ।

দিন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন, ভারত কারও একার দেশ নয়। এই দেশে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ বিদ্বেষ প্রচার করছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, হিজাব, মাদ্রাসা বা খাদ্যাভাসের নামে একটি বিশেষ সম্প্রাদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না বলেই বারবার একই কায়দায় মুসলিম মাঝে মাঝে খ্রিস্টানদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। ভারতে বছরের পর বছর ধরে নানা ধর্মের মানুষের সহাবস্থান। সবাই একে অপরের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করে। কিন্তু বিজেপির সাম্প্রদায়িক ঘৃণ্য রাজনীতি দেশের ঐতিহ্য নষ্ট করছে।



বৌদ্ধ ধর্মগুরু . অরুণজ্যোতি ভিক্ষু বলেন, কোনও ধর্ম বা সেই ধর্মের প্রিয় মানুষকে নিয়ে অবমাননা দেশের সংবিধান কালচার অনুমোদন দেয় না। আমরা চাই উসকানি দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ সম্প্রাদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য নূপুর শর্মা নবীন জিন্দালকে কড়া শাস্তি দিতে হবে।

রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিনিধি স্বামী . প্রেমানন্দ গিরি মহারাজও নবী মুহাম্মদ সা.-এর অবমাননা নিয়ে সরব হন। দোষীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন। অন্য ধর্মকে সম্মান করলে নিজেকেই সম্মানিত করা হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।একই কথা বলেন মাওলানা সাদাব মাসুম। তিনি বলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই হল আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। হযরত মুহাম্মদ সা.কে সমস্ত ধর্মের মানুষই শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নবী সা. সম্পর্কে মিথ্যাচার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে বিজেপি।

রহমত আলি খান বলেন, বর্তমানে ভারতবর্ষে যে ঘৃণা-বিদ্বেষের পরিবেশ গড়ে উঠেছে তা শেষ পর্যন্ত দেশ সব ধর্মের সাধারণ মানুষের ক্ষতি করবে। আচার্য গোপাল ক্ষেত্রী, খ্রিস্টান মিশনারি অ্যাসোসিয়েশনের বিশপ পিটার অলোক মুখার্জী, শিখ ধর্মের প্রতিনিধি স্বরণ সিং সকলেই মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের সমালোচনা করেন এবং পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার দাবি জানান। কলকাতা খিলাফত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ বলেন, বিজেপি ঘৃণা বিদ্বেষের প্রচার করছে যা দেশের চিরায়ত ঐতিহ্যকে নষ্ট করছে। সংবিধান সম্প্রীতি রক্ষা না করে প্রশাসন যে ভূমিকা নিয়েছে তিনি তারও নিন্দা করেন

সৌজন্যে: পুবের কলম

Post a Comment

0 Comments