না ফেরার দেশে চতুরঙ্গ-র সম্পাদক আব্দুর রাউফ, সাহিত্যমহলে শোকের ছায়া

আসিফ রেজা আনসারী


চলে গেলেন বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, প্রাবন্ধিক,  লেখক ও পত্রিকা-সম্পাদক আব্দুর রাউফ (৭৬ )। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এপার বাংলায় যে কজন মুসলিম বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিবৃত্তিকচর্চা ও দক্ষতাগুনে সর্বজনগ্রাহ্য এবং সমাজে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম 'চতুরঙ্গ' পত্রিকার সম্পাদক আব্দুর রাউফ। তিনি শুধু মুসলিম জনমানসেই তাঁর পরিচিতিকে আবদ্ধ রাখেননি বরং সর্বস্তরের মানুষের কাছে সমান গুরুত্ব ও সম্মানের অধিকারী ছিলেন রাউফ সাহেব। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্যমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী মানুষ তাঁর বাড়িতে ভিড় করেছেন শেষ দেখা দেখতে।


বর্ণময় এই মানুষটি এক সময় আনন্দবাজারে চাকুরি করেছেন। শুধু তাই নয়, লিখেছেন এক ডজন দৈনিক কাগজে। এছাড়াও অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনের জন্যেও লিখেছেন। তবে রাউফ সাহেবকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার  উপসম্পাদকীয় বিভাগ। তিনি নিয়মিত লিখতেন। একসময় ব্রাইট স্ট্রিট থেকে দিনকাল নামে একটি সাময়িক ম্যাগাজিন বের হোত বিশিষ্ট সমাজসেবী মুহাম্মদ শাহ আলমের পৃষ্ঠপোষকতায়। ওই পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রাউফ।
মৌলানা আজাদ কলেজ ও  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র আব্দুর রাউফের উল্লেখযোগ্য বই- স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান, মুক্তমনের সঙ্কট, বহুমাত্রিক নজরুল, ভারতের বাংলাভাষী মুসলমান, গণতন্ত্র ও সংখ্যালঘু সমস্যা। তিনি হুমায়ুন কবীর ও আতাউর রহমান প্রতিষ্ঠিত চতুরঙ্গের ২৬ বছর সম্পাদক ছিলেন। 

আব্দুর রাউফ সাহেবের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, আবদুর রাউফ সাহেব বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৭.৪৫ মিনিটে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টের কাছে ৭ নম্বর মেহের আলি রোডের ফ্ল্যাটে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি)৷ আবদুর রাউফের পুত্র আসাদ রউফ নেদারল্যান্ডসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা  পিতার মৃত্যুর খবর পাওয়ার কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন৷ এসে পৌঁছাবেন শনিবার সাকালে। সেদিনই আবদুর রাউফের দাফন হবে। বউমা বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। 
গত এপ্রিল মাস থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন৷ শেষ স্টেজে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল৷ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে বাড়িতে রেখেই তার চিকিৎসা চলছিল৷ পরপর দুইবার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন আব্দুর রাউফ৷
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হুগলির গয়েশপুরে তাঁর জন্ম৷ তারকেশ্বর হাইস্কুলে পড়াশোনার পর কলকাতার মাওলানা আজাদ কলেজ থেকে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে এমএ করেন। লেখালেখি করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা, দৈনিক বসুমতী, পুবের কলম, কলম, যুগান্তর, আজকাল, সংবাদ প্রতিদিন ইত্যাদি পত্রিকায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় সংহতি পরিষদ তাঁকে সম্মানিত করে, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির লিটল ম্যাগাজিন মেলায় সেরা সম্পাদক হিসেবে পুরস্কার প্রদান করেছে। সাপ্তাহিক প্ত্রিকা নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments